'নতুন জামা' বিষয়ে একটি খুদে গল্প রচনা করো :
নতুন জামা
নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে জামিল। শূন্যের মাঝে শূন্য
দৃষ্টিতে যেন রিক্ততার প্রবল বহিঃপ্রকাশ। একদিন এই নদীর ধারেই বাড়িঘর ও
জায়গা-জমি ছিল জামিলের। খেটে খাওয়া এক পরিশ্রমী কৃষক জামিল। শাক-সবজির পাশাপাশি
কিছু ধানের জমিতেও বর্গা দিত সে। মোটামুটি ভালো অবস্থানে থাকা অবস্থায় কুদ্দুস
মিয়ার বড় মেয়ে জমিলাকে বিয়ে করে সে। সচ্ছল অবস্থায় পার হয়ে যাচ্ছিল
নবদম্পতির সংসার। কিছুদিন বাদে তাদের পরিবার আলো করে জন্ম নেয় এক কন্যা সন্তান
রঞ্জনা। রঞ্জনা এখন কিশোরী।
বর্ষাকাল চলছে। এবার বর্ষা আসার আগেই পদ্মা বেশ ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। গ্রামের যারা
প্রধান ব্যক্তি ছিলেন তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে এবার সর্বনাশা পদ্মা সব গ্রাস
করে ফেলবে। গ্রামের মানুষও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। কারণ পদ্মার পাড়েই তাদের
বাড়িঘর ও জমিজমা। নদীভাঙন শুরু হলে তারা সবাই নিঃস্ব হয়ে যাবে। দিন যেতে থাকে,
পদ্মার পানিও বাড়তে থাকে। পদ্মার প্রবল পরাক্রমশালী ঢেউ প্রথমে জামিলের আবাদি
জমিগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। জামিল ও জমিলা দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। জমি তো গেছে,
এবার যদি বাড়িটাও না টেকে তবে তাদের পথে বসতে হবে।
দুই মাস পর সর্বস্ব হারিয়ে রাস্তার পাশে কুঁড়ে ঘরে বাস করতে হয় তাদের। ঘরে
নিজেদের খাবার নেই। এর মাঝে গরিবের দরজায় এসে হাজির হয় মুসলমানদের প্রধান
ধর্মীয় উৎসব ঈদ। মানুষের ঘরে উৎসেবের আমেজ লাগে। নতুন জামা-কাপড় কেনার ধুম লেগে
যায়। জামিলের কিশোরী মেয়ে রঞ্জনা এসব দেখে বাবার কাছে নতুন লাল জামার জন্য
আবদার করে। এদিকে জামিলকে দুমুঠো খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সন্তানের
আবদার পূরণ করার মতো সামর্থ্য নেই তার। জমিলাকে ডেকে সব খুলে বলে জামিল। জমিলাও
জানে জামিলের বর্তমানে নতুন জামা কিনে দেবার সামর্থ্য নেই। জমিলা বলে, শুনলাম
চৌধুরী সাহেব এবার অনেক নতুন কাপড় এনেছেন জাকাত দেবার জন্য। সেখানে থেকেই
রঞ্জনার জন্য নতুন লাল জামা এনে দেওয়া যেতে পারে।
পরদিন সকালে চৌধুরী বাড়িতে জাকাতের কাপড় আনতে যায় জমিলা। অনেক মানুষের ভিড়ে
সেও লাইনে দাঁড়ায় একটি জামার আশায়। হঠাৎ মানুষের চাপাচাপিতে জমিলার দুর্বল
শরীর মাটিতে পড়ে যায়। পদতলে পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারায় জমিলা। আর পদ্মার পাড়ে
দাঁড়িয়ে শূন্য দৃষ্টিতে শূন্যের দিকে চেয়ে থাকে সর্বস্ব হারানো একজন মানুষ।